সিসি ক্যামেরা কী? জেনে নিন কেন ব্যবহার আপনার জন্য খুবই জরুরী। তাই সিসি ক্যামেরা ব্যবহার ও কেনার আগে কিছু বিষয় আপনার জেনে নেওয়া দরকার। সিসি ক্যামেরা বিলাশিতা নয় এটা অতি জরুরী হয়ে উঠেছে এখন।
আপনার চোখে পড়ে নিশ্চয়ই? ‘এই ভবনটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে’ বর্তমানে অফিস কিংবা বাসা-বাড়ির নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা অন্যতম এক উপায়। সিকিউরিটি গার্ড থাকলেও এখন সিসি ক্যামেরার ওপরই সবাই ভরসা রাখছেন। প্রতিটি রুমেই সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা রাখা যায়। এতে আপনি যে কোনো সময় যে কোনো সময়ের ফুটেজ দেখে নিতে পারবেন। সিসি ক্যামেরার পূর্ণরূপ হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।
কর্মীদের মনোযোগ বৃদ্ধিঃ সিসি ক্যামেরা কর্মীদের কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি করে। কেননা সকল কর্মীদের কাছে তার চাকরি জীবন জীবিকার একটা অবলম্বন। অতএব ছোট বড় কোন ভুলের জন্য সে চাকরি হারাতে রাজি না। আর তাইতো সিসি ক্যামেরা থাকলে কর্মীরা কাজ করে আরও সতর্কভাবে।
অফিস মনিটরিংঃ আপনার অফিস যদি একটু বড় হয় কিংবা অনেকগুলো কামরা বা কয়েক তলা বিশিষ্ট হয় তবে নি:সন্দেহে সিসি ক্যামেরা আপনার জন্য উপকারি। কেননা একমাত্র সিসি ক্যামেরাই পারে আপনার বড় অফিস, মিল বা ফ্যাক্টরিকে আপনার চোখের সামনে এনে দিতে।
বাসা বা রান্নাঘর মনিটরিংঃ বর্তমান সময়ে হরহামেশাই শোনা যায় যে বাসায় পরিচারিকার কাজের ফাঁকির কথা ও রান্না ঘরে জিনিষ খোয়া যাওয়ার কথা। একটি IP Camera (আইপি ক্যামেরা) / Analog Camara (এনালগ ক্যামেরা)/ WiFi IP Camera (ওয়াইফাই আইপি ক্যামেরা) পারে আপনার এই সমস্যার সমাধান হতে। এতে করে বাসা ও রান্নাঘর অনেক নিরাপদ থাকবে জিনিষ হারানোর হয় নাই।
একে ক্লোজ সার্কিট টিভি ক্যামেরা (Closed-circuit television) বা সিসি টিভি (CCTV) ক্যামেরাও বলা হয়। এটি মূলত সচল অবস্থায় সবসময় ভিডিও ধারণ করতে থাকে। এতে মেমোরি থাকা সাপেক্ষে ভিডিও ধারনের সঙ্গে সঙ্গে সংরক্ষণও করে রাখতে পারে। সংরক্ষণের মেয়াদ মেমোরির আকার অনুসারে একদিন থেকে এক বছর বা তারও বেশি সময়ও হতে পারে। সিসি ক্যামেরায় যে ভিডিও ধারণ হয় তা রিয়েল টাইমে টিভি (realtime television),মনিটর বা অন্য যে কোনো ডিসপ্লেতে দেখা যায়।
বর্তমানে বাজারে ইন্টারনেট সুবিধাসহ ওয়াইফাই ক্যামেরা পাওয়া যায়, একে বলে ওয়াইফাই আইপি ক্যামেরা। এর সাহায্যে বিশ্বের যে কোনো স্থানে বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখা যায়। বাসা বা অফিস এর চারদিকে চারটি সিসি ক্যামেরা লাগালে এক স্থানে বসেই চতুর্দিকে পর্যবেক্ষণ করা যাবে।
নাইট ভিশন এবং কালার ভিশন বর্তমানে দুই ধরনের ক্যামেরা পাওয়া যায়,নাইট ভিশন ক্যামেরা অন্ধকারে সাদাকালো দেখা যায় আর আলোতে কালার দেখা যায়,কালার ভিশন ক্যামেরা অন্ধকার এবং আলো দুটোতেই আপনার কালার দেখা যায়
যদিও সিসিটিভি ক্যামেরা কেনাটা কয়েক বছর পূর্বে একটা ব্যয়বহুল বিষয় ছিল,তবে বর্তমানে এর দাম সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে আসায় অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনে এর ব্যবহার শুরু করেছে। আপনি চাইলেই সিসিক্যামেরা যখন তখন কিনতে পারেন তবে তা যে আপনার মনের মত পারফরম্যন্স দিবে তার নিশ্চয়তা কতটুকু? তাই এটি কেনার আগে কিছু বিষয় বিষয় চিন্তা-ভাবনা করা উচিত যা আপনাকে পরবর্তীতে আফসোস করা থেকে বাঁচাবে। চলুন দেখে কী সেই সকল বিবেচ্য বিষয়।
সিসি ক্যামেরা অনেক ধরনের হয়ে থাকে- IP Camera (আইপি ক্যামেরা) / Analog Camara (এনালগ ক্যামেরা)/WiFi IP Camera (ওয়াইফাই আইপি ক্যামেরা)। ডোম সিসি ক্যামেরা/বুলেট সিসি ক্যামেরা, এটি আবার ২ ধরনের মেটাল ও প্লাস্টিক হয়।
এনালগ ক্যামেরা (Analog Camera) এটি DVR এর মাধ্যমে ভিডিও সংরক্ষিত হয়,এই পদ্ধতিকে ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার বলে। IP Camara এটি এনভিআর (NVR) এর মাধ্যমে ভিডিও সংরক্ষিত হয় /এই পদ্ধতিকে নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডিং (Network Video Recorder) বলে।
এনালগ ক্যামেরা কি এটি হলো এমন একটি সিস্টেমেটিক (DVR) ডিভিআর, এর মাধ্যমে আমরা সেটাপ করে থাকি,এই ক্যামেরা ইনস্টলেশন করতে হলে আমাদের ডিভিআর ,এবং হার্ডডিক্স ,ভিডিও বেলুন, 12 ভোল্টের এডাপ্টার,ক্যামেরা, লাগবে এবং পরিমাণ মতো আমাদের কেবল নিতে হবে ইন্টারনেট ক্যাবল (RJ45 / Cat6) যাতে করে আমরা ক্যামেরার সাথে ডিভিআর এর সাথে কানেকশন দিতে পারি আর যেকোন মাপের একটি মনিটর হলে আমরা লাইভ ভিডিও দেখতে পারবো এবং ডিভিআর এর সাথে ইন্টারনেট কানেক্ট করলে আমরা যেকোন জায়গা থেকে মোবাইল বা কম্পিউটারের সাহায্যে দেখতে পারব । বিভিন্ন কোম্পানির ডিভিআর এর উপর বিভিন্ন অ্যাপস রিক্রুটমেন্ট হয়ে থাকে ওই নিদৃষ্ট অ্যাপের সাহায্যে আমরা লাইভ ভিডিও রেকর্ড দেখতে পারি।
আইপি ক্যামেরা (IP Camera): সেটআপ করতে যা যা লাগে, শুরুতে আমাদের এনবিআর (NVR) নিতে হবে, তারপর আমাদের পিওই সুইচ (POE Switch) নিতে হবে, ক্যামেরা নিতে হবে, ইন্টারনেট ক্যাবল নিতে হবে,পিওই সুইচ ব্যবহার না করলে নরমাল সুইচ ব্যবহার করলে আলাদা পাওয়ার এটেপটার দিয়ে পাওয়ার দিতে হবে পিওই এই সুইচ, এটি ডাটা এবং পাওয়ার দুটি একসাথে ট্রান্সফার হয়,তাই আলাদা ক্যামেরা তে পাওয়ার দেওয়া প্রয়োজন হয় না।
WiFi IP Camera (ওয়াইফাই আইপি ক্যামেরা): এটি অনেক ধরনের হয়ে থাকে যেমন,ডোম ক্যামেরা এটি 360°1080p Wide হয়ে থাকে এটির আকৃতি গোলাকার। এ ধরনের ক্যামেরা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট পরিমাপে 360°1080p Wide ঘুরতে পারে। ডোম ক্যামেরার এতে কথা রেকর্ডিং হবে একদিক থেকে বললে অপরদিকে শোনা যাবে আপনি চাইলে আপনার অফিসের লোকজনের সাথে ক্যামেরামাধ্যমে কথা বলতে পারেন এবং তারা যা বলে তা আপনি স্পষ্ট শুনতে পারেবেন ও দেখতে পারবেন ,এটির ডাটা ট্রান্সফারের জন্য কোনো তারের প্রয়োজন হয় না। তবে ক্যামেরাটি সচল রাখতে পাওয়ার ক্যাবলের সংযোগ দিতে হবে।
ওয়াইফাই আইপি বুলেট ক্যামেরা /এটি আপনার বাসা বা অফিসের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় লাগিয়ে রাখলে একটি মেমোরির মাধ্যমে ভিডিও রেকর্ড হয়ে ক্যামেরার ভিতরে জমা থাকবে আপনি চাইলেই ভিডিও মোবাইলের মাধ্যমে এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে এর নির্দিষ্ট অ্যাপ আছে, অ্যাপস এর সাহায্য নিয়ে আপনি ভিডিও দেখতে পারবেন,এই ক্যামেরা বিভিন্ন মডেল অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার কাভারেজ দিয়ে থাকে, এটির ডাটা ট্রান্সফারের জন্য কোনো তারের প্রয়োজন হয় না। তবে ক্যামেরাটি সচল রাখতে পাওয়ার ক্যাবলের সংযোগ দিতে হবে।
ডোম ক্যামেরা এই সিসি ক্যামেরাটি বদ্ধ স্থানে ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত। বাসা, অফিস, রেস্তোরাঁর ভেতরে ব্যবহার করা যাবে এ ধরনের ক্যামেরা। আকৃতি গোলাকার। এটি ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ভিডিও রেকর্ড করে, তাই এই ক্যামেরা এক রুমে একটি লাগালে পুরা রুম সুন্দর ভাবে কাজ করে এই ক্যামেরায় ভিডিও রেকর্ড করার জন্য ডিভিআর কিংবা এনবিআরের সাথে তার দিয়ে সংযোগ করতে হবে
বুলেট সিসি ক্যামেরা বুলেটের মতো দেখতে হওয়ায় একে বুলেট সিসি ক্যামেরা বলা হয়। এটি সাধারণত রাস্তায় ব্যবহার করা হয়।, এই সিসি ক্যামেরা বাড়ির বাইরে দরজা বা জানালার দেয়ালে কিংবা ছাদ থেকে নিচের দিকে মুখ করে লাগানো যায়। এই ক্যামেরা দিয়ে আপনি বড় হল রুম বা বিভিন্ন কক্ষের খুব সুন্দর ভিডিও রেকর্ড করা যায় ভিতরে দুই ধরনের ক্যামেরা হয় একটি ভয়েস কন্ট্রোল আরেকটি বয়েজ বিহীন,যেটি ভয়েস কন্ট্রোল ওটাতে আপনার ভয়েস রেকর্ড থাকবে , এই ক্যামেরায় ভিডিও রেকর্ড করার জন্য ডিভিআর কিংবা এনবিআরের সাথে তার দিয়ে সংযোগ করতে হবে।
ই মাউন্ট সিসি ক্যামেরা ই মাউন্ট সিসি ক্যামেরার সাহায্যে কোনো স্থানের রিয়েল টাইম ফুটেজ দেখার সময় জুম ইন বা জুম আউট করা যায়। এই ক্যামেরায় বিশেষ ধরনের লেন্স ব্যবহার করা হয়। ৩০/৪০ ফুট দূরবর্তী স্থান পর্যন্ত কাজ করতে পারে এটি।
নাইট ভিশন সিসি ক্যামেরা ইনফ্রারেড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এই ক্যামেরায়। ইনফ্রারেড প্রযুক্তির মাধ্যমে এই সিসি ক্যামেরা অল্প আলোতেও ভালো কোয়ালিটির ভিডিও ধারণে সক্ষম। দিনের আলোতে রঙিন এবং রাতে সাদাকালো ভিডিও ধারণ করতে পারে এই ক্যামেরা। সাধারণত ফ্যাক্টরি, গোডাউন যেখানে দিন ও রাত সবময়ই সিসি ক্যামেরার প্রয়োজন এসব স্থানে এই ক্যামেরা বসানো যেতে পারে।
পিটিজি সিসি ক্যামেরা প্যান টিল্ট জুম এর সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে পিটিজি। অর্থাৎ এই ক্যামেরায় একই সঙ্গে তিনটি ফিচার কাজ করবে। যে কোনো স্থানের সম্পূর্ণ কভারেজ দিতে সক্ষম এই ক্যামেরা। ম্যানুয়ালি প্যান (ডানে বামে সড়ানো), টিল্ট (উপর নিচ করা), জুম (জুম ইন এবং জুম আউট করা) করা যাবে এর সাহায্যে।
ওয়্যারলেস সিসি ক্যামেরা এই ক্যামেরা সেটআপের সাহায্যে দূরবর্তী স্থানে বসে সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখা যাবে। প্রতিষ্ঠান ভেদে আলাদা আলাদা মডেলের ক্যামেরার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা স্মার্টফোন অ্যাপও রয়েছে। এটির ডাটা ট্রান্সফারের জন্য কোনো তারের প্রয়োজন হয় না। তবে ক্যামেরাটি সচল রাখতে পাওয়ার ক্যাবলের সংযোগ দিতে হবে।